প্রিয় বন্ধুরা, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগত, আজ আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করব দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় 'ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যুগ' -এর প্রথম পার্টের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি -
১. দ্বিতীয় রণাঙ্গন বা Second Front বলতে কি বোঝ?
উত্তর ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তি যে রণাঙ্গন তৈরি করেছিল তা দ্বিতীয় রণাঙ্গন বা Second Front নামে পরিচিত। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ৬ জুন আমেরিকা ও ব্রিটেন এই রণাঙ্গন উন্মুক্ত করলে রাশিয়া সন্দিহান হয়ে পড়ে।
২. কোন দেশ দ্বিতীয় রণাঙ্গন উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল?
উত্তর ঃ রাশিয়া।
৩. কোন সময়ে দ্বিমেরু বিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল?
উত্তর ঃ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে।
৪. দ্বিমেরুকরণ বলতে কি বোঝ?
উত্তর ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি শক্তিজোট এবং সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের উদ্ভব ঘটে, যেখানে বিশ্বের প্রধান প্রধান রাষ্ট্রগুলি এই দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ‘দ্বিমেরুকরণ’ বলেছেন।
৫. ঠাণ্ডা লড়াই বলতে কি বোঝ?
উত্তর ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট এবং সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে সরাসরি কোন যুদ্ধ না হলেও এই দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে অবিশ্বাস, ভীতি, সন্দেহ ইত্যাদির বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে এবং এক সংঘাতময় অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়। এই অবস্থায় যুদ্ধ হয়নি এবং পুরোপুরি শান্তিও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশ্বরাজনীতিতে এই তৈরি হওয়া এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিই ‘ঠাণ্ডা লড়াই’ নামে পরিচিত।
৬. 'ঠাণ্ডা যুদ্ধ' শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন?
উত্তর ঃ মার্কিন কূটনীতিবিদ বার্নার্ড বারুচ 'ঠাণ্ডা যুদ্ধ' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ১৬ এপ্রিল তিনি কলম্বিয়া শহরের একটি ভাষণে প্রথম এই শব্দটি প্রকাশ্যে ব্যবহার করেন।
৭. মলোটভ -এর পরিচয় দাও।
উত্তর ঃ মলোটভ ছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
৮. 'লৌহ যবনিকা তত্ত্ব' বা 'ফালটন বক্তৃতা' বলতে কি বোঝ?
উত্তর ঃ ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ১৯৪৬ সালের ৫ মার্চ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফালটনের ওয়েস্টমিনিস্টার কলেজে একটি বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, ইউরোপের অনেক অঞ্চল সোভিয়েত রাশিয়ার লৌহ যবনিকার অন্তরালে চলে যাচ্ছে। তাই অতিসত্বর যদি প্রতিরোধ গড়ে তোলা না যায় তাহলে সমগ্র ইউরোপ একদিন সোভিয়েতের দখলে চলে যাতে পারে। চার্চিলের এই বক্তৃতা 'লৌহ যবনিকা তত্ত্ব' বা 'ফালটন বক্তৃতা' নামে ইতিহাসে খ্যাত।
৯. কে, কবে, কোথায় ফালটন বক্তৃতা দিয়েছিলেন?
উত্তর ঃ ১৯৪৬ সালের ৫ মার্চ ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চার্চিল আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনের ওয়েস্টমিনিস্টার কলেজে ফালটন বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
১০. ট্রুম্যান -এর পরিচয় দাও। তিনি কবে তার নীতি ঘোষণা করেছিলেন?
উত্তর ঃ হ্যারি ট্রুম্যান ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি। ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ তিনি তার বিখ্যাত নীতি 'ট্রুম্যান নীতি' সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন।
১১. ট্রুম্যান নীতি কি?
উত্তর ঃ সোভিয়েত রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ একটি ঘোষণা করেছিলেন যা 'ট্রুম্যান নীতি' নামে পরিচিত। এর উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র আক্রমণকারীদের বা বিদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে যেসব জাতি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে আমেরিকা তাদের সামরিক ও আর্থিক সাহায্য করবে।
১২. ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তর ঃ আর্থিক সাহায্য করার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মার্কিন অস্ত্র ও শিল্পোৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করা, আমেরিকার শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি ঘটানো।
১৩. কেন্নান -এর 'বেষ্টনী নীতি' বলতে কি বোঝ? অথবা, বেষ্টনী নীতি বলতে কি বোঝ? বা সীমায়িতকরণের নীতি বলতে কি বোঝ?
উত্তর ঃ সোভিয়েত আগ্রাসনের মোকাবিলার জন্য মার্কিন কূটনীতিবিদ জর্জ এফ কেন্নান পত্রিকায় ছদ্মনামে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে 'সোভিয়েত কার্যকলাপের উৎস' নামে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন আমেরিকার উচিত সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাবযুক্ত অঞ্চলগুলিকে বাড়তে না দেওয়া। কেন্নান প্রকাশিত এই নীতিই বেষ্টনী নীতি নামে পরিচিত।
১৪. ট্রুম্যান নীতিকে বেষ্টনী নীতি বলার কারণ কী?
উত্তর ঃ ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখা, তাই ট্রুম্যান নীতিকে বেষ্টনী নীতি বলা হয়।
১৫. মার্শাল পরিকল্পনা কবে হয়? এর উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তর ঃ মার্শাল পরিকল্পনা ঘোষিত হয়েছিল ৫ জুন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুজ্জীবন ঘটানোই ছিল মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।
১৬. মার্শাল পরিকল্পনা বলতে কি বোঝ?
উত্তর ঃ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সুযোগে যাতে সেখানে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত না হয় তার জন্য ১৯৪৭ সালের ৫ জুন মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব জর্জ সি মার্শাল আমেরিকার সাহায্যদানের ওপর ভিত্তি করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। এটিকে মার্শাল পরিকল্পনা বলা হয়ে থাকে।
১৭. মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তর ঃ সোভিয়েত প্রভাব মুক্ত রাখার জন্য রাষ্ট্র গুলিকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা, মার্কিন ব্যবসাবাণিজ্যের উন্নতিসাধন করা, একটি অনুগত রাষ্ট্রজোট গঠন করা ইত্যাদি ছিল মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।
১৮. মার্শাল পরিকল্পনার মূল কথা কি?
উত্তর ঃজর্জ সি মার্শাল তার মার্শাল পরিকল্পনায় বলেন যে, মার্শাল নীতি কোন দেশের বা কোন মতাদর্শের বিরুদ্ধে ঘোষিত হয়নি। এটির আসল উদ্দেশ্য হল বেকারত্ব দুর করা, ক্ষুধা দুর করা, দারিদ্র ও হতাশার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী যেকোন দেশ আর্থিক সাহায্য লাভ করতে পারবে।
আরও পড়ুন ঃ
১. দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস꘡সপ্তম অধ্যায়꘡ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যুগ꘡পার্ট ২
24mcq
0 Comments